৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের সকল স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের প্রেরণার উৎসঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

3144

Published on মার্চ 9, 2018
  • Details Image
    বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আয়োজনে 'ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে অতুলনীয় উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর এই ভাষণ বিশ্বের সকল স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস।

শেখ হাসিনা শনিবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্ট কর্তৃক বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন সমগ্র বাঙালি জাতি এর জন্য গর্বিত। এই ভাষণ ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘ ২১ বছর হারিয়ে গিয়েছিলো এবং যা মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছিলো, আমরা আমাদের সেই ‘হারানো মানিক’ ফিরে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, কেবলমাত্র আমাদের জন্যই নয়, বিশ্বের সকল স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের জন্য এই ভাষণ প্রেরণার উৎস।’ ফলে বিশ্বের সকল দেশ এই ঐতিহাসিক ভাষণ অনুসরণ করতে পারে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্ট শনিবার বিকেলে নগরীর বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন। এর ওপর আলোচনা করেন এশিয়ান এজ্্-এর সহযোগী সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের সিইও মাশুরা হোসেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি ছাড়া বিশ্বের আর কোনো জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছরের এ ধরনের সফল অসহযোগ আন্দোলন করতে পারেনি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রতিপক্ষ ছিলো আল-বদর, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। তারা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে উন্নয়নের গতি থামিয়ে দিয়েছিলো এবং ইতিহাস বিকৃতি করে। কিন্তু, এখন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এবং এখন এটি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ একটি অসহযোগ আন্দোলনকে সশস্ত্র বিপ্লবে পরিণত করে। এই ভাষণ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সকল মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি প্রদানের উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাবে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেও এটি উল্লেখ করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং এগিয়ে যাবো, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।

১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চের ঘটনাবলী স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেনানিবাস থেকে একজন স্কুটার চালক তাদের কাছে একজন বাবুর্চির একটি ক্ষুদ্র বার্তা দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তানিরা মাঝ রাতের পরে দেড়টায় হামলা শুরু করবে। কিন্তু দখলদার বাহিনী সেদিন রাত ১১টাতেই হামলা শুরু করে।

তিনি বলেন, সেই বার্তাতে বঙ্গবন্ধু ইপিআরের চার কর্মকর্তার কাছে টেলিফোনে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তা পাঠান এবং তাদের নির্দেশ দেন যাতে পাকিস্তানিরা হামলা শুরু না করা পর্যন্ত তারা সেই বার্তা প্রচার না করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে থামাতে চট্টগ্রামে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করায় জিয়াউর রহমান বাঙালিদের ওপর গুলি চালিয়ে অসংখ্য লোককে হত্যা করে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের অনেক নেতা সেই ঘটনা জানে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যতবারই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনেন ততবারই তাঁর কাছে তা নতুন মনে হয়। ‘সম্ভবত এর আবেদন আমাদের জীবৎকালে কখনো ফুরাবে না এবং যুগযুগ ধরে এটি তাঁর অবস্থান তৈরি করে নেয়া অব্যাহত রাখবে।’

ঐতিহাসিক ৬-দফা দাবি থেকে শুরু করে ৭ মার্চের ভাষণ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় ও ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করার চেষ্টার দোষ চাপিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা হেফাজতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর পর গোটা বাঙালি জাতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং পাকিস্তানিরা ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর এমনই দূরদর্শিতা ছিল যে, তিনি ভাল করেই জানতেন ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না।

তিনি বলেন, সেজন্য বঙ্গবন্ধু আগেভাগেই কিভাবে গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে, কিভাবে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাবে এবং কারা বাঙালিদের সমর্থন করবে তা ভেবে রেখেছিলেন।

তিনি স্মরণ করেন যে, দেশে এখনকার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মত সেসময় ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য একটি ২০ দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। তারা আশা করেছিল যে, এই জোট অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি আসন পাবে আর এরফলে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠা পাবে না। তিনি বলেন, কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ ফজলুল হক মনির মাধ্যমে ছাত্রলীগকে জনগণের কাছে জয় বাংলা স্লোগান জনপ্রিয় করে তোলার নির্দেশনা দিয়েছিল। তিনি বলেন, এছাড়া বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের আগেই জাতীয় পতাকার আকৃতি ও রঙের সমন্বয়ে এবং ‘সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত করার কথা ভেবেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা ও কিছু আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে ৬-দফা দাবি ও ৮-দফা দাবি নিয়ে বিরোধের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তখন সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে ৬-দফাই সিদ্ধান্ত। আর তিনি তা থেকে নড়বেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের প্রতিটি বর্ণ ও শব্দ দিয়ে জনগণের কাছে স্বাধীনতার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং এটা ছিল ইয়াহিয়া খানের ৬ মার্চের ভাষণের যথার্থ জবাব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লিখিত ছিল না। আর তিনি এটি আগে এটি রিহার্সেলও করেননি।

তিনি বলেন, ‘বক্তৃতার আগে আমার মাও বঙ্গবন্ধুকে তাঁর মনে যা আসে তাই বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্যদের কথায় কান দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি তাঁকে বাঙালিদের ওপর দীর্ঘ ২৩ বছরের নির্যাতনের ইতিহাস বলার পরামর্শ দেন।’

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত