বিএনপির অরাজকতার নাম রাজনীতিঃ অজয় দাশগুপ্ত

6294

Published on ফেব্রুয়ারি 5, 2018
  • Details Image

আমাদের দেশে রাজনীতি এবং রাজনীতির ধারা পাল্টে দিয়েছে কারা? খুববেশি দূরে যাবার দরকার দেখি না। এই সেদিনও আমরা বিএনপি আমলের ঘটনাগুলোর দিকে চোখ ফরালে দেখবো একটি দল দেশশাসনে থাকার পরও কতটা নির্মম আর নিষ্ঠুর হতে পারে। সেদিনগুলো বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। আজ তারা আবার চড়াও হচ্ছে। কার ওপর? দেশের পুলিশ ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত বাহিনীর ওপর। শেখ হাসিনা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশের ওপর আক্রমণ বরদাশত করা হবে না।

বিএনপির এই আগ্রাসী মনোভাবের কারণ বোঝা কঠিন কিছু না। তারা যেনতেন প্রকারে গদি চায়। আর গদি হারানোর রাগে সুযোগ পেলেই এমন সব কণ্ড ঘটিয়ে থাকে। বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির সেই দল যাদের আসলে কোন আক্কেল দাঁতই ওঠেনি। এই দলটি সরকারে থেকে ইচ্ছেমতো গজিয়ে ওঠা একটি দল। বহুবার ভাবি গণতন্ত্র ও জনস্বার্থে একটি বিরোধী দল থাকা দরকার। এবং তাদের যে জনসমর্থন তারা কেন তা করে না? সে দায়িত্ব পালন তাদের জন্য মঙ্গলের হলেও আসলে বিএনপি রাজনৈতিক শিষ্টাচার মানার দল নয়। এটাই তাদের ইতিহাস। বিএনপিকে আওয়ামী লীগ হটায়নি। তাকে অবৈধভাবে সরকার গঠনের কারণে সরিয়ে দিয়েছিল ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা। তারপর জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। সে থেকে তারা রাজপথে থাকার পরিবর্তে একের পর এক ষড়যন্ত্র আর সংঘাতে সরকার পতনের জন্য মরিয়া।

বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কি আছে? এ কথাটা তাদের নেতারাই জানেন না। তাদের নেতাদের দিকে তাকালে এখন কেমন জানি দুঃখ হয়। যে বয়সে মানুষ পরিশীলিত হয় যে বয়সে মানুষ দেশের কল্যাণ মঙ্গলের কথা ভেবে নিভৃতে জীবন কাটায় সে বয়সে তারা তারুণ্যের রিহার্সাল দেয়। বুঝতে চায় না সে সময় কত আগে শেষ হয়ে গেছে। সম্প্রতি একটি কথা আমার মতো অনেকের মনে দাগ কেটেছে।

দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) যে আইনে বেগম খালেদা জিয়ার বিচার হচ্ছে সেই আইন তিনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে করা হয়েছে। মওদুদ আহমদ নিজেই এ আইন করেছেন। সেই আইনে তিনি বাড়ি হারিয়েছেন এবং অর্থ আত্মসাত মামলায় তাঁর বিচার হচ্ছে। তাই বেগম জিয়াকে বলব, ভবিষ্যতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে যেন মওদুদের কথা না শোনেন।’

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এসব কথা বলেন। কোন আওয়ামী নেতা বা সুশীলের কথা না এটা। যারা বলেছেন তারা দুদকের মানুষ। কেন তারা বললেন? কারণ এই নেতারাই আসলে দেশের কাল। যাদের চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। তাদের তুরুপের তাস একটি, বেগম জিয়া। জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা জানে এই পরিবার ছাড়া খেলা জমবে না। তাই আর কারও দরকার নেই। হাজার নেতা-কর্মী না থাকলেও হবে। থাকতে হবে ম্যাডাম জিয়াকেই। তিনি এখন বয়সের ভারে ক্লান্ত। তার সঙ্গে থেকে সাহস দেয়া বা লড়াই করার মতো নেতা কে আছে দলে? থাক না থাক তারা এখন মারমুখী। কারণ আইনের হাত যখন ঠেকানো যাচ্ছে না তখন পথ একটাই নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্য তারা আগেও করেছিল। খুব বেশিদিনের কথা নয়। আমরা দেখেছিলাম ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট হয়ে উঠেছিল কান্নার এক কারাগার। সেখানে আগত মানুষের আহাজারি যানবাহনে অগ্নিদগ্ধ মানুষকে মানুষ মনে করেনি বিএনপি। সে সময় তাদের আক্রমণে চাটগাঁর এক তরুণীর চোখ ঝলসে যায়। একচোখ হাতে চাপা দেয়া মেয়েটির ছবি ভুলিনি আমরা। তার চোখের পানি বহানোর মতো দুটো চোখ আস্ত রাখেনি রাজনীতি। অথচ তাদের মহাসচিব মির্জা সাহেব ক’দিন পর দুচোখে মায়াকান্নার পানি ঝরিয়েছিলেন কর্মীদের জন্য। নিজের দুচোখ খোলা রেখে মানুষের একচোখ কানা করে দেয়ার রাজনীতিই বিএনপিকে ডুবিয়েছে।

আবারও ভুলপথে পা বাড়িয়েছে তারা। দেশে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে রাগ আছে। অভিমান আছে। তাদের সবকাজ ঠিকঠাক নয়। তাদের মন্ত্রী মিনিস্টার বা এমপি নেতারা দেদার টাকা কামাচ্ছেন। নতজানু নীতি আর হামবড়া ভাব নিয়ে তাদের ইমেজ আজ প্রশ্নের মুখে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না বিএনপি। তাদের টার্গেট আওয়ামী লীগ বা নেতারা না। টার্গেট শেখ হাসিনা। কারণ তিনি একাই একশ’। তিনি এদেশের ইতিহাস শুদ্ধ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগুচ্ছে। শত বাধার পরও তিনি এককভাবে শক্তিশালী। বিএনপি জানে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, তাঁকে সহজে আর মানানো যাবে না। তাই আজকের নৈরাজ্য আবার ফিরে আসতে চাইছে। কিন্তু তারা জানে না বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসতেন বলে দুর্বল ছিলেন। মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ব বহু জায়গায় তাঁকে কঠোর হতে দেয়নি। শেখ হাসিনা ব্যতিক্রমী। তিনি দেশকে ভালোবাসেন। তাঁর কাছে সবার চেয়ে বড় দেশ। তাই তিনি ঝেড়ে মুছে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর পারেন বলেই বাহিনী থেকে মানুষ সবাই জানে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বড় ভরসা।

এবার বিএনপি পড়েছে বড় বিপদে। খালেদা জিয়ার সাজা হলে নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে তাদের রাজনীতি মুখথুবড়ে পড়বে। সেখান থেকে উঠে আসার পথ নেই তাদের। কারণ, তারা বহু আগে জনগণ থেকে সরে এসেছে। এখন প্রশ্ন, তাদের এই রাজনীতি কি দেশবাসী সহ্য করবে? দেশের মানুষকে এর আগেও যারা জিম্মি রেখে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল তারা কেউ তা পারেনি। আজকের বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে বিএনপি অচেনা। তারা জিয়াউর রহমানকে জানে না। খালেদা জিয়াকেও তেমন একটা চেনে না। এই বাস্তবতায় মওদুদ বা রিজভীর মতো নেতারা আসলে কি করবেন বা করতে পারবেন? ভাঙচুর মারামারি রাস্তা ঘাট দখল কিংবা ঢাকা অচলের ডাক শুনছি। এই নৈরাজ্য ঠেকানোর দায়িত্ব প্রশাসনের। মানুষ অহেতুক জান দিতে যাবে না। তাদের নিরাপত্তা আর নিরাপদ সমাজ বহাল রাখার কাজ আওয়ামী লীগকেও নিতে হবে। সরকারে থাকতে থাকতে তারা মাঠ ভুলে প্রশাসনের অপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। সে জায়গাটায় এখনই গা ঝাড়ার সময়।

যেসব সুশীলনামধারী ও কথিত বিরোধীরা রাজনীতি নেই বলে দুঃখ করেন তাদের কাছে জানতে চাই রাজনীতি মানে কি জ্বালাও পোড়াও? রাজনীতি মানে পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়া? এই সাহসের নাম দুঃসাহস। এই নীতির নাম অরাজকতা। বিএনপি এখনও যেটুকু টিকে আছে সেটা হারাতে হলে তাদের এই নৈরাজ্যের পথেই যেতে হবে। আর টিকতে চাইলে শুদ্ধ রাজনীতিতে ফেরার বিকল্প নেই। ভাষার মাসে বইমেলার মাসে এমন নৈরাজ্য তাদেরই মানায়। কারণ তারা মনে প্রাণে বাংলাদেশ বা এর সংস্কৃতিকে ভালবাসে না। শেখ হাসিনা যে বলেন এরা আসলে পাকিস্তানের রাজনীতি করেন কথাটা আবারও প্রমাণ করল জাতীয়তাবাদীরা।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত