বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি’র আন্দোলন সফল হবে না : প্রধানমন্ত্রী

1227

Published on ডিসেম্বর 14, 2014
  • Details Image

‘খালেদা জিয়া বিজয়ের মাসে কড়া আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় দেশের কৃতি সন্তানদের হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের আন্দোলন সফল হবে না।’ অতীতের মতোই জনগণ তাদের অশুভ নীল নকশা ভণ্ডুল করে দেবে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা প্রধানমন্ত্রী গতকাল এ কথা বলেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর খামারবাড়ীতে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সংসদের উপনেতা ও দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের পুত্র এবং শহীদ ডা. আলিম চৌধুরীর মেয়ে তাদের পিতাদের ওপর অত্যাচারের বর্ণনার স্মৃতিচারণ উপস্থিত সুধীদের হৃদয় বেদনা আক্রান্ত করে তোলে।

রাজাকার ও আলবদরদের নিয়ে শনিবার নারায়ণগঞ্জের জনসভায় বিএনপি নেতার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কিভাবে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের একদিন আগে রাজাকার, আলবদর ও জামায়াতে ইসলামীদের সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন ?

শেখ হাসিনা বলেন, মঞ্চে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী নেতা ছিল এবং সেখানে ব্যানার, ফেস্টুন ও বেলুনে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের পাশাপাশি রাজাকার ও আল-বদর নেতারা জনসভায় ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের রক্ষায় এই জনসভার আয়োজন করা হয়। এই জনসভা থেকে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আমার প্রতি অভিশাপ (গজব নাজিল) দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। ‘যদি এমন ঘটতো তাহলে একটি গরুও বেঁচে থাকতো না।’

তিনি বলেন, দেশে কতিপয় শকুন আছে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায় এবং দেশকে ধ্বংস করতে চায়।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রায় ঘোষিত হচ্ছে এবং রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ দেশকে দীর্ঘদিনের কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে সকল রায় বাস্তবায়ন হবে।

পাকিস্তানের দালালরা যাতে কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারে, লোকদের হত্যা এবং জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে নতুন করে শপথ নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে শহীদ দেশের কৃতি সন্তানদের জন্য ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে।

বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করার অপচেষ্টার কারণে খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বিডিআর বিদ্রোহের ঘাতকদের রক্ষা করতে চেয়েছিল এবং ওই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের অভিযুক্তদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বিডিআর বিদ্রোহের দেড় ঘণ্টা আগে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি আরো বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসাবে তিনি তখন পুলিশ প্রটেকশন, নিরাপত্তা ও গাড়ি সুবিধা পেতেন। কিন্তু এসব সুবিধা বাদ দিয়ে কেন তিনি গোপনে লুকালেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের ওপর দায় চাপাতে চান। কিন্তু এটাই সত্য যে, বিডিআর মহাপরিচালকসহ ৩৭ সেনা অফিসার যারা ছিলেন আওয়ামী লীগ পরিবারের।

শেখ হাসিনা বলেন, ওই দুঃসময়ে সরকারের সহযোগিতায় সকলেই এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ১৪ দল, এমনকি এইচএম এরশাদও সরকারের পাশে ছিল। কিন্তু তখন খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন ? তিনি আরো বলেন, এজন্য খালেদা জিয়াকে কৈফিয়ত দিতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ওই সময় সরকারকে সহযোগিতা করেনি বরং তাদের আইনজীবীরা বিডিআর হত্যাকান্ডের আসামিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, তিনি যদি মায়াকান্না না করতেন তবে, কেন তিনি আসামিদের বিচারে সহায়তা করছেন না।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যদি এই হত্যাকান্ডে জড়িত না’ই থাকবে তবে কেন তাদের আইনজীবীরা ঘাতকদের রক্ষা করতে আদালতে দাঁড়াবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ওই আইনজীবীদের সকল বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবেন। তিনি বলেন, ‘এই আইনজীবীদের আয়ের উৎস কোথায়, কিভাবে তারা এত টাকা পান।’

তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ও তার দলের লোকেরা বিচারে বিলম্ব এবং খুনীদেরকে রক্ষার ব্যাপারে জড়িত ছিল। তিনি বলেন, ‘বিচার বিলম্বিত করে তারা খুনীদেরকে রক্ষা করতে চেয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি- জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের এবং ১৫ আগস্টের খুনীদের পক্ষ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেগুলোর মতো তারা বিডিআর হত্যাকান্ডের খুনীদের রক্ষার্থে তাদের পাশেও দাঁড়িয়েছিল’।

বিএনপি’র চরিত্রই হলো হত্যাকান্ড ও বোমাবাজিকে প্রশ্রয় দেওয়া। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের অপশাসনের সময় তারা আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এএমএস কিবরিয়া, নাটোরের মমতাজউদ্দিন, খুলনার মনজুরুল ইমামকে তারা হত্যা করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি- জামায়াতের সন্ত্রাসীরা হত্যার রাজত্ব কায়েম করেছিল, দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল এবং বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করেছিল।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যেভাবে হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তারা সেই পথই অনুসরন করেছিল।

যখনই বিএনপি- জামায়াত দুষ্টচক্র রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তখনই তারা হত্যা ও রক্তের খেলায় মেতে উঠে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কেউই তাদের রোষানল থেকে বাঁচতে পারেনি।’

কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, দারিদ্র বিমোচন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তা আরও উন্নত হবে।

লক্ষ্য অর্জনে সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক যেরকম স্বপ্ন দেখেছিলেন, সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে সেরকম ক্ষুধা, দারিদ্রতা এবং অশিক্ষা মুক্ত সোনার বাংলা গড়া।’

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত